ঘি এবং মাখন এর মাঝে পার্থক্য

প্রতিদিনের রান্নার কাজে বিশেষ করে ভাজাপোড়ার কাজে এবং মিষ্টান্ন তৈরীর ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে আমরা ঘি বা মাখন ব্যবহার করে থাকি। বিশেষ করে এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত দেশ গুলোতে ঘি’র ব্যবহার বেশ প্রচলিত এবং ইউরোপীয় এবং আমেরিকার দেশগুলোতেও মাখন বেশি প্রচলিত।

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে যে, ঘি এবং মাখন একই উৎস থেকে তৈরি করা হলেও বিভিন্ন রান্নার ক্ষেত্রে এদের ব্যবহার বিভিন্ন রকম কেন হয়ে থাকে। যদি আমরা ঘি আর মাখন এর পার্থক্য বুঝে ফেলতে পারি তাহলে সহজেই নির্ধারণ করতে পারব যে কোন রান্নার জন্য মাখন উপযুক্ত এবং কোন রান্নার জন্য ঘি উপযুক্ত। 

ঘি এবং মাখন উভয়ই হচ্ছে দুধজাত পণ্য এবং সাধারণত গরুর দুধ থেকে ঘি এবং মাখন দুটি প্রস্তুত করা হয়। সহজভাবে এদের মাঝে পার্থক্য বলতে গেলে যেটি রয়েছে, তা হচ্ছে দুধকে প্রক্রিয়াজাত করে মাখন তৈরি করা হয়; এবং মাখনকে প্রক্রিয়াজাত করলে ঘি পাওয়া যায়।

রাসায়নিকভাবে বিবেচনা করা হলে, মাখনের মাঝে দুগ্ধজাত ফ্যাট ছাড়াও অন্যান্য উপাদান থাকে যার মাঝে ল্যাকটোজ অন্যতম এবং এটি থেকে যখন ঘি তৈরি করা হয়, তখন মাখনের ফ্যাট-জাতীয় অংশ এবং দুগ্ধজাত মিল্ক সলিড্‌স অংশ -এই দুই অংশ আলাদা আলাদা করে ফেলা হয় এবং সেই মিল্ক সলিড্‌স উপাদানগুলোকে অপসারণ করলেই যে পরিশোধিত ফ্যাট পাওয়া যায় তা হচ্ছে ঘি। এটি হচ্ছে এদের রাসায়নিক ও পদার্থগত পার্থক্য। 

ঘিকে সাধারণত ক্লারিফাইড বাটার নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।

এখন আসা যাক রান্নার ক্ষেত্রে। কখন কোনটি ব্যবহার করা হয় তা আমরা জানি। মাখনের স্ফুটনাংক বা স্মোকিং পয়েন্ট ল্যাকটোজ এর চেয়ে অনেক বেশী হয়ে থাকে। সেজন্য আপনি যদি মাখন ব্যবহার করে উচ্চ তাপমাত্রার কোন রান্না করতে যান তবে দেখা যাবে যে মাখনের অংশ ঠিকঠাক থাকলেও ল্যাকটোজ এর অংশ সহজে পড়ে যাচ্ছে বা বাদামি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মাখন এর পরিবর্তে ঘি ব্যবহার করলে যা হয় তা হচ্ছে যেহেতু ল্যাকটোজ জাতীয় অংশ ইতিমধ্যে অপসারণ করা হয়ে গেছে তাই সব মিলিয়ে ঘি’র স্মোকিং পয়েন্ট বেড়ে যায়। ফলে উচ্চ তাপমাত্রার রান্না করার ক্ষেত্রে মাখন এর পরিবর্তে ঘি বেশি উপযুক্ত হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে যেসব খাবার প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে দুগ্ধজাত ল্যাকটোজ প্রয়োজন হয়ে থাকে ফ্লেভারের কারণে সেসব খাবার এর ক্ষেত্রে ঘি’র পরিবর্তে মাখন ব্যবহার করাই শ্রেয়।

কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকের ল্যাকটোজেন টলারেন্স নামক একটি কন্ডিশন থাকে। যার ফলে তাদের ল্যাকটোজ হজম করতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। তাদের ক্ষেত্রে মাখন এর পরিবর্তে ঘি ব্যবহার করা উত্তম।

অন্যভাবে বলতে গেলে, যেসব রান্নার ক্ষেত্রে অতি উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োজন হয় সেসব ক্ষেত্রে ঘি ব্যবহার করা উত্তম। এবং, যেসব রান্নার ক্ষেত্রে মিল্ক সলিড্‌স এর ফ্লেভার প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু অতিরিক্ত তাপমাত্রার প্রয়োজন পড়ে না, সেসব ক্ষেত্রে মাখন ব্যবহার করা শ্রেয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *