চীনে খাদ্যাভ্যাস – পর্ব ২

দেশ-বিদেশে খাদ্যাভ্যাস সিরিজের আগের পর্বে আমরা দেখেছি চাইনিজদের খাদ্যাভাসের সম্পর্কে কিছু তথ্য। এই পর্বে আমরা চাইনিজদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বিশেষ করে তাদের খাবার খাওয়ার সময় যে অভ্যাস গুলোর সেগুলো নিয়ে আপনাদের কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করব।

সাধারণত বিভিন্ন দেশের খাবার জন্য বিভিন্ন রকমের খাদ্যাভ্যাস থাকে। আপনার দেশে হয়তো চাইনিজ খাবার কিংবা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থাকতে পারে কিন্তু চীনে সেই খাবার কিংবা সেখানকার রেস্টুরেন্ট এর ব্যাপার গুলো পুরোটাই আলাদা। আপনি যদি কখনো চীনে ঘুরতে যাওয়ার কথা পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে এই তথ্যগুলো চাইনিজদের খাদ্যাভ্যাসের সম্পর্কে আপনাকে জানতে এবং মনে রাখতে সাহায্য করবে।

১. চাইনিজরা সাধারণত খাবার খাওয়ার জন্য চপস্টিক ব্যবহার করে। তারা খাবার খাওয়ার জন্য কখনওই কাটা চামচ কিংবা ছুরি ব্যবহার করেনা। তবে চিন্তার কিছু নেই আপনি যদি চীনে টুরিস্ট হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকেও খাবার খাওয়ার জন্য চপস্টিক ব্যবহার করতে হবে না। আপনি চাইলেই হয়তো বা রেস্টুরেন্ট থেকে আপনি  কাটা চামচ কিংবা ছুরি দেয়া হবে।

২. উত্তর চায়নায় সাধারণত চাইনিজ মানুষরা গমের তৈরি নুডুলস তাদের প্রধান খাবার হিসেবে খেয়ে থাকেন যেখানে দক্ষিণ চায়নায় চাইনিজরা প্রধান খাবার হিসেবে ভাত খেয়ে থাকে। তবে দক্ষিণ চায়নায় নুডুলস পাওয়া যায় এবং সেগুলো সাধারনত চাল দিয়ে তৈরি করা নুডুলস। 

৩. চীনে ভাগাভাগি করে খাওয়ার ক্ষেত্রে ভাত সাধারণত আলাদা করে ছোট বোল এ দেয়া হয়। মাংস বা সবজির তরকারি গুলো সাধারণত প্লেটে কিংবা বড় বোল এ দেয়া হয় যাতে করে সেখান থেকে সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খেতে পারেন। পশ্চিমাদের মতো প্রতিজনের জন্য একটি করে প্লেট দেয়া হয় না।

৪. চাইনিজ খাবার গুলো আবার পুরো চায়না জুড়ে একেক জায়গায় একেক রকম হয়। চীনের বিভিন্ন জায়গায় তাদের আঞ্চলিক খাবার রয়েছে যেগুলোর স্বাদ – ঝাল, মিষ্টি, টক আলাদা হয়ে থাকে। 

৫. চীনে রেস্টুরেন্টে খেতে বসার সময় যদি চার জনের বেশী মানুষ হয় তবে সে ক্ষেত্রে গোলটেবিল দেয়া হয় এবং টেবিলের মাঝে একটি লেজি সুসান গ্লাস দেয়া হয়ে থাকে যেটি দিয়ে টেবিলের মাঝ থেকে সহজেই খাবার নেয়া যায়। 

৬. চাইনিজ খাবারের উপকরণগুলো বিভিন্ন রকমের হয় এবং বাইরের মানুষদের জন্য সেগুলো বেশ জঘন্য লাগতে পারে। যেমন তারা রান্নার উপকরণ হিসেবে ব্যাঙ, মুরগির পা, শুকর এর কান, কুকুরের মাংস এগুলো ব্যবহার করে থাকে।

৭. সেখানে সাধারনত খাবার টেবিলে লবণ কিংবা মরিচ গুড়ার বোতল অথবা টমেটো সসের বোতল থাকে না। বরং সেখানে খাবার টেবিলে সয়া সস, ভিনেগার এবং মরিচের পেস্ট পাওয়া যায়।

৮. কিছু কিছু চাইনিজ রেস্টুরেন্টে চিৎকার-চেঁচামেচি চলতে পারে যেহেতু সে সব জায়গায় মানুষজন তাদের কথা বলার সময় কণ্ঠস্বর নিচু করে না এবং কিছু জায়গায় ধূমপানের কারণে রেস্টুরেন্ট ধোঁয়াটে অবস্থায় থাকে। তবে সম্প্রতি জনসম্মুখে ধূমপান করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

৯. চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সাধারণত বেহারাদেরকে টিপস দিতে হয়না কারণ সেখানে খাবারের মূল্য সাথেই তাদের সার্ভিস চার্জ যুক্ত থাকে।

১০. যদি আপনার কোন চাইনিজ বন্ধু খাবার খাওয়ার সময় আপনার প্লেটে খাবার তুলে দেয় তার মানে এই নয় যে সে ক্ষেপে না পেরে আপনাকে দিতে চাইছে বরং এটি তাদের বন্ধুত্ব এবং কাছে আসার একটি চিহ্ন। এই ব্যাপারটি সাধারণত পরিবারের সবার সাথে খাওয়ার ক্ষেত্রে ঘটে থাকে কারণ এর মাধ্যমে ছোটরা বড়দেরকে সম্মান এবং বড়রা ছোটদের ভালোবাসা প্রকাশ করে। 

দেশ-বিদেশে খাদ্যাভাস সিরিজ এর এই পর্বে আমরা চীনের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কিছু তথ্য জানলাম। পরবর্তী পর্বে আমরা অন্য কোন একটি দেশ বা জাতির খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আরো কিছু তথ্য আপনাদেরকে জানানোর জন্য চেষ্টা করব। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *