ইউরোপ এ খাদ্যাভ্যাস: পর্ব – ২

আমাদের এই দেশ বিদেশে খাদ্যাভ্যাস সিরিজের লেখার আগের  পর্বটিতে আপনারা ইউরোপে খাদ্যাভ্যাসের সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনেছিলেন। আমাদের এই দেশ বিদেশে খাদ্যাভ্যাস সিরিজের এই পর্বে আমরা ইউরোপের খাদ্যাভ্যাসের আরো কিছু তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি।

একজন পর্যটক যখন কোন দেশে ঘুরতে যান তখন সে দেশের জায়গার সাথে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি অন্য যে জিনিসটি তার মন আকর্ষণ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেটি হচ্ছে সে জায়গার বিশেষ এবং অতি পরিচিত খাবার। তেমনি ভাবে বলা যায় ইউরোপের রাঁধুনিদের ভাপ দিয়ে তৈরি করা মাছের এক প্রকার খাবার যেটি সেখানকার বন্দরগুলোর ঐতিহ্য বহন করে থাকে। এছাড়াও সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে মার্সেই শহরের রুইলি মাছের রসুন দিয়ে তৈরি করা কাঁটাযুক্ত বুদবুদময় বোলাবেইস খাবারের কথা যেটি এই শহরের ঐতিহ্য বহন করে। একইভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে বার্সেলোনার জারজুয়েলা মাছের কথা যেটা দিয়ে এই শহরের ঐতিহ্যবাহী এবং সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয় যা কিনা পর্যটকদের মন কাড়তে বাধ্য। 

এছাড়া ইউরোপের উত্তরে থাকা বেলজিয়ামের নদীগুলো থেকে পাওয়া এক ধরনের সাদা মাছ দিয়ে তৈরি করা হয় ওয়াটারজুই। আর এই তিন ধরনের ভাপে সিদ্ধ করে রান্না করা মাছ যার উপরে কিনা স্যাফ্রন দিয়ে অন্য রকম সুস্বাদু করে তোলা হয় সেগুলো এই জায়গাগুলোর চমৎকার ঐতিহ্যবাহী এবং প্রসিদ্ধ খাবার। আর ইউরোপের এই খাবারগুলোর ওপরে ক্রোকাস দিয়ে তৈরি করা ঝাঁঝালো উপকরণ ব্যবহার করে খাবারকে অধিক সুস্বাদু করা হয়ে থাকে। আর তাদের এই উপকরণ গুলো এসেছে উত্তর আফ্রিকার ইবেরিয়া থেকে। 

ইউরোপ ত্যাগ করার পূর্বে মুর সম্প্রদায় ইউরোপিয়ানদের খাবারের আরো একটি চমৎকার খাবার যোগ করে গেছে। ভ্যালেন্সিয়ার সামুদ্রিক খাবার এবং এর সাথে ছোট দানার চাল ও অন্যান্য অনেক উপাদান যোগ করে তৈরি করা হয় স্যাফ্রন এর ঘ্রানযুক্ত রিসোটো মিলানেজ। এছাড়াও এই মুর সম্প্রদায় ইউরোপ থেকে যাওয়ার পূর্বে ইউরোপিয়ানদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে তাদের জন্য রেখে গেছে কাটাপ্লানা নামের এক ধরনের পাতিল এর মত যন্ত্র যেটি দিয়ে তারা এই চমৎকার এবং সুস্বাদু খাবারগুলো তৈরীর জন্য পরিমাণ মত ভাপ এবং বাষ্প দিতে পারে।

এমনি করে নানা এলাকা থেকে নানা ধরনের খাবার এবং সেগুলো তৈরি করার যন্ত্র কিংবা উপাদান ইউরোপিয়ানদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে সহায়তা করেছে। এগুলো যেমন করে ইউরোপিয়ানদের নিজেদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেছে তেমনি এই চমৎকার খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাস সেখানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদেরও আকর্ষণ করতে খুবই সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করে। আর এই খাবার এবং খাদ্যাভ্যাস এর মাধ্যমে এখানকার অতীত এবং বর্তমান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে একটি জাতির খাদ্যাভ্যাস তাদের অতীত এবং বর্তমান কে স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরে। কিংবা অন্যান্য জায়গার খাদ্যাভ্যাস এবং তাদের খাবারের অতীত এবং বর্তমান নিয়ে জানতে হলে আমাদের এই দেশ বিদেশে খাদ্যাভ্যাস সিরিজের বাকি লেখাগুলো পড়তে থাকুন। পরবর্তীতে আমরা আফ্রিকা, এশিয়া এবং অন্যান্য জায়গার খাদ্যাভ্যাস নিয়ে লেখার চেষ্টা করব। 

Leave a Comment