ইউরোপ এর খাদ্যাভ্যাস: পর্ব – ১

জর্জিয়ার তিবলিসির সিল্ক রোড থেকে শুরু করে পর্তুগালের আলেন্তেজোর আগ্নেয়গিরি সাথে নিয়ে স্কটল্যান্ড এর মরিচের উঁচু ভূমি সহ পুরো ইউরোপ জুড়েই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংস্কৃতি এবং খাবার ও খাদ্যাভ্যাসের এক অপূর্ব সমাহার এর বৈচিত্র্যময় মেলা। এ মহাদেশের প্রতিটি খাবার টেবিলে রয়েছে বিশাল সাম্রাজ্য ও  বাণিজ্যের অপূর্ব ফল। এখানে যেমন নিজেদের তৈরিকৃত খাবার আসে তেমনি উত্তর আফ্রিকা, এশিয়া এবং আমেরিকা থেকে বিভিন্ন রকমের মাংস, মাছ, সবজি,  ফলমূল এবং রান্নার বিভিন্ন উপকরণ ও উপায় এসে জড়ো হয়। আর এসব মিলেই ইউরোপের জাতিগত খাদ্যাভ্যাস এবং এখানকার খাবারসমুহকে করে তুলেছে এককথায় অনন্যসাধারণ।

একটি বিশেষ খাবারের স্বাদ অন্য কোন স্থানে গেলে তা কমে আসে। যেমন গ্রীকে জন্মানো ফাভা শিম অন্য কোন দেশের বা মহাদেশের মাটিতে জন্মানোর চেষ্টা করা হলে তার প্রকৃত স্বাদ একদমই থাকেনা। ঠিক একই ভাবে বলা যায় ইতালিয়ান পাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে যে উপাদানগুলো সেখানকার নিজস্ব ভূমিতে উৎপাদন করা হয়ে থাকে সেগুলো অন্য কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলে কিংবা উৎপাদন করা হলে সেগুলো থেকে তৈরিকৃত পাস্তা ইতালিয়ান পাস্তার মত এত সুস্বাদু পাস্তা হয় না। একইভাবে রোমান আর্টিচোক অন্য কোথাও তৈরি করার চেষ্টা করলে তার গুণগতমান হয়তো ঠিক থাকে কিন্তু তাদের বেলায় প্রকৃত স্বাদ এর ধারে কাছে ঘেষতে পারেনা।

উষ্ণ পানি কিংবা ঠান্ডা, মিষ্টি কিংবা লবণাক্ত –  সমুদ্র, লেক কিংবা নদী, বিভিন্ন উপাদান এবং এখানকার পরিবেশ ইউরোপে তার নিজস্ব চমৎকার সব খাবার তৈরির মূল উপকরণ হিসেবে প্রভাব রাখে। এগুলোর কারণেই ব্রাসেলস এর বাষ্পীয় ঝিনুক থেকে শুরু করে উত্তর সাগর পাড়ের মাছ ভাজার মতো সুস্বাদু খাবারের প্রস্তুত করন করা হয় এখানে। ক্রোয়েশিয়ার স্ফটিক অ্যাড্রিয়াটিক পানিতে  থাকা স্ক্যাম্পিকে  টমেটো রসুন এবং হোয়াইট ওয়াইন দিয়ে রান্না করলে তা যে কি পরিমান সুস্বাদু হয় তা বলে বোঝানোর মত নয়। কাস্পিয়ান সাগর এর স্টারজন মাছ সুস্বাদু ক্যাভিয়ার এর মত চমৎকার খাবার উৎপন্ন করতে সাহায্য করে এবং নরওয়ের বরফময় নদীর উপকূল থেকে যে গোলাপি বর্ণের মাংস সহ স্যালমন মাছ পাওয়া যায় সেগুলো লবণ মুক্ত তীব্র সুস্বাদু খাবার তৈরি করতে সাহায্য করে।

পুরো ইউরোপ জুড়ে তার বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান নদী কিংবা সাগর থেকে প্রাপ্ত মাছ কিংবা সেখানকার অন্যান্য রান্নার উপকরণ দিয়ে খাবার তৈরি করা হয় সেগুলোর সুস্বাদু গুণ এবং অন্যান্য নানা কারণে সেখানকার মানুষের খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে সহায়তা করে। আর এই সুস্বাদু খাবার গুলো যখন একজন পর্যটক সেখানে ঘুরতে গিয়ে টেস্ট করে দেখেন তখন সেখানকার চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্য অবলোকন করার পাশাপাশি এই সুস্বাদু খাবার গুলো পর্যটক এর মনে গেঁথে থাকে। এতে করে নিজ দেশে ফিরে গেলেও পর্যটক এর ইউরোপের সেই খাবারগুলো স্মৃতি মনে থাকে এবং তিনি সে সম্পর্কে অন্যদের জানাতে পারেন।

ইউরোপের কিছু খাবার এবং সেখানকার কিছু খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আমরা এই লেখায় জানলাম। তাদের খাদ্যাভ্যাস এর বাকি ব্যাপার গুলো সম্পর্কে আমরা পরবর্তী লেখাগুলোতে জানানোর চেষ্টা করব। 

Leave a Comment