যে কোন উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান এবং পরিচর্যা। একটি সফল বাগানের মূল চাবিকাঠি হল বাগানে বিদ্যমান উদ্ভিদগুলো কে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারা। সাধারণত উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান মাটি থেকে সংগ্রহ করে শিকরের মাধ্যমে এবং একটি জৈব বাগানে ব্যবহারকৃত কম্পোস্ট সারের মাঝে কমবেশি সকল মৌলিক উপাদান গুলো বিদ্যমান থাকে। তারপরও উদ্ভিদের পরিপূর্ণ বৃদ্ধির জন্য আরও কিছু পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন যার সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আমরা জৈব বা কৃত্রিম সার ব্যবহার করে থাকি। বিভিন্ন উদ্ভিদ, প্রাণী এবং খনিজ উৎস থেকে সংগ্রহকৃত উপাদান দিয়ে তৈরি জৈব সার নিশ্চিত করে যে উদ্ভিদ প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদানের নিয়মিত সরবরাহ পাচ্ছে।
কিন্তু, যারা নতুন করে বাগান শুরু করছেন তারা প্রতিনিয়ত একটি বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে যা হলো জৈব সার ব্যবহার করা ভালো নাকি কৃত্রিম সার ব্যবহার করা ভালো? আসুন দেখে নেওয়া যাক এক নজরে জৈব সার এবং কৃত্রিম সার এর সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য গুলো এবং কোন ধরনের সার বাগানের জন্য অধিক উপযুক্ত:
জৈব সার হল সেই সার যার সাধারণত বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উৎস থেকে বিভিন্ন উপাদান নিয়ে তৈরি করা হয়, যার কারণে এসব সার হরেক রকমের পুষ্টি উপাদান বহন করে থাকে. তার সাথে এই সারকে আরো পুষ্টিগুণসম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের জৈব উপাদান মিশ্রিত করে তারপর জৈব সার মাটিতে প্রয়োগ করা হয়।
জৈব সার প্রয়োগের ফলে মাটির বাস্তুসংস্থানের উপযুক্ত পরিচর্যা হয় এবং ফলে উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণের একটি বড় অংশ জৈব সারের উপাদান গুলো থেকে সংগ্রহ করতে পারে।
অন্যদিকে কৃত্রিম সার হচ্ছে সেইসব রাসায়নিক সার যেগুলো কৃত্রিমভাবে তৈরি এবং মূলত তিনটি উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়-নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম।
বিভিন্ন ধরনের বাগানের জন্য বিভিন্ন রকম সারের প্রয়োজন হলেও সাধারণত উদ্ভিদ এবং মাটি উভয়ের জন্য জৈব সার তুলনামূলকভাবে বেশি উপযুক্ত। নিম্নোক্ত কারণে কৃত্রিম রাসায়নিক সারের তুলনায় জৈব সার বেশি নিরাপদ এবং উপযুক্ত:
- জৈব সার উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানগুলো সরবরাহের পাশাপাশি মাটির সাথে মিশে মাটিরও নানাবিধ উপকার করে এবং তারই পাশাপাশি জৈব সারের উপাদান গুলো মাটিতে ধীরে ধীরে মিশতে থাকে যার ফলে উদ্ভিদের যখন যতটুকু প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ পেয়ে থাকে।
- জৈব সার উপাদান গুলো তুলনামূলক জটিল প্রকৃতির হয়ে থাকে যার ফলে বৃষ্টির পানি বা কৃত্রিম সেচের কারণে সহজেই মাটি থেকে সারের উপাদানগুলো ধুয়ে যায় না।
- জৈব সারের মধ্যে সাধারণত কৃত্রিম কোন উপাদান না থাকার কারণে বিভিন্ন সদ্য বিকশিত দুর্বল চারা নতুন অবস্থায় স্যারের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। অন্যদিকে, কৃত্রিম সার এ ব্যবহৃত বিভিন্ন তীব্র রাসায়নিক পদার্থের কারণে নতুন চারাগুলো সহজেই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।
- জৈব সার মাটিতে উপস্থিত মাইক্রোব গুলোকে সঠিকভাবে মাটিতে অবস্থান করতে দেয় যার ফলে মাইক্রোব গুলো পুষ্টি উপাদানসমূহ উদ্ভিদকে পৌঁছে দিতে সক্ষম হতে পারে।
- মোটের উপর বলা যায় যে জৈব সার গুলো কৃত্রিম রাসায়নিক সারের তুলনায় তুলনামূলক রাসায়নিকভাবে কম তীব্র হওয়ার কারনে এবং উদ্ভিদ এর পুষ্টিগুণ ও সরবরাহের পাশাপাশি মাটির পরিচর্যায় সহায়তা করে থাকে।
তাই বাগানে উদ্ভিদগুলোর সুস্থ ও সবল বৃদ্ধির জন্য জৈব সার সর্বদাই অধিক উপযুক্ত এবং বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ব্যতিত রাসায়নিক সার যথাসম্ভব কম ব্যবহার করাই শ্রেয় এবং উদ্ভিদের জন্য অধিক উপযুক্তও বটে। প্রয়োজন অনযায়ী সঠিক পরিমাণে জৈব ও কৃত্রিম সার প্রয়োগ করা হলে তবেই মাত্র উদ্ভিদের সুস্থ-স্বাভাবিক বৃদ্ধি আশা করা যায়।