একটি টেকসই বাড়ির জন্য যেমন একটি শক্ত ভিত্তির প্রয়োজন তেমনি একে স্বাস্থ্যবান উদ্ভিদের জন্য মাটির প্রয়োজন যা উদ্ভিদের কি করে পানি বাতাস এবং পুষ্টি সরবরাহ করে থাকবে। যারা বাগান তৈরি করতে চায় তাদের খুব কম সংখ্যকই আদর্শ মাটি দিয়ে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়ে থাকে। তবে একটি চমৎকার জমি আগে থেকে পেয়ে থাকলেও একটি পরিপূর্ণ বাগান তৈরীর জন্য মাটিকে সুস্থ রাখা এবং গাছগুলোকে সাহায্য করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেকোনো বাগান করার এবং গাছ লাগিয়ে সেগুলোর পরিচর্যার ক্ষেত্রে সফল হতে সবচেয়ে চমৎকার এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হচ্ছে জমি প্রস্তুত করা এবং সেখানকার মাটিকে একটি চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুস্থ রাখা।
জমি প্রস্তুত করা বলতে বোঝায় মাটিকে জীবন দান করা। জীবাণু, কীট, ফাঞ্জাইসহ অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের উপাদান এবং একটি আদর্শ পরিবেশ মাটিকে দেয়া যাতে করে সেটি নিজের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারে। কোন কিছু ফেরত না দিয়ে মাটির কাছ থেকে ক্রমাগত নিতে থাকলে সেটি প্রাকৃতিক চক্রকে ভেঙে দেয় এবং পরবর্তীতে এর ফলাফল ভাল হয় না। শস্য কেটে ফেললে, মাটির ঘাস ছোট করে কেটে সেগুলোকে সরিয়ে ফেললে অথবা যে পাতাগুলো জমিতে পড়ে সেগুলো পরিষ্কার করে ফেললে মাটিতে জৈব পদার্থ গুলো সরিয়ে ফেলা হয় কারণ এগুলো মাটিতে গিয়ে জৈব পদার্থ হিসেবে কাজ করার কথা। যদি জমির জন্য যথেষ্ট জৈব পদার্থ ব্যবহার করা হয় তবে ধীরে ধীরে মাটির স্বাস্থ্য নিম্নমুখী হতে থাকে। প্রাকৃতিক ভাবে যে পুষ্টি উপাদানগুলো গাছের দরকার সেগুলোর পরিবর্তে রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলে গাছের পুষ্টির অভাব পূরণ হতে পারে কিন্তু এটি ব্যবহারে জমির প্রাকৃতিক এবং জৈব পদার্থের অভাব পূরণ হয় না।
জমি প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সচরাচর ব্যবহার করা একটি প্রক্রিয়া। জৈব পদার্থের জন্য কম্পোস্ট সার একটি আদর্শ উৎস হতে পারে। এছাড়া পুরনো এবং ফসলের গাছের বাকি থাকা অংশও জৈব পদার্থের উৎস হিসেবে চমৎকার কাজ করে। জমির আদর্শ pH মান নিয়ন্ত্রণে রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কারণ এটি মাটির জীবন প্রক্রিয়া এবং মাটি থেকে উদ্ভিদ কেমন পরিমাণ পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারবে সেটিকে প্রভাবিত করে।
যে কাজগুলো মাটির ক্ষতি করে সেগুলো করা থেকে বিরত থাকাও অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ ভারী পা নিয়ে জমিতে হাঁটলে অথবা তার উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করলে এবং সার ও কীটনাশক এর ভুল প্রয়োগে মাটির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয় এবং এতে করে জমির উদ্ভিদের সহায়তা করার গুণ নষ্ট হয়ে যায়। সেহেতু এই সবগুলো যেন বাগান করার জমিতে না ঘটে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে জমির ক্ষতিসাধন না হয় যেন না একটি আদর্শ জমির উপর নির্ভর করে একটি বাগান কতটা সুন্দর করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
বাগান করার মৌলিক কৌশল হিসেবে জমি তৈরির এই প্রক্রিয়া গুলো খেয়াল রাখলে সহজে বাগান তৈরি করা সম্ভব হয়।