অর্গানিক বাগান বলতে মূলত বোঝায় যে বাগান তৈরির সময় সার ও কীটনাশক এড়ানো হয়। কিন্তু অর্গানিক বাগান তৈরির আসল ব্যাপার এর চেয়েও বেশি কিছু বোঝায়। অর্গানিক খাবার, ফলমূল এবং জমি একত্রে পরিবেশের সাথে চমৎকার সহাবস্থানে থাকতে সাহায্য করে। অনেকের জন্যই অর্গানিক উপায়ে বাগান প্রস্তুত করা জীবনের অন্যতম একটি মাধ্যম।
অর্গানিক বাগান কী?
মাটি, পানি ও বাতাস মানুষের সাথেসাথে গাছ, পোকামাকড়, পাখি ও প্রাণীদেরকেও প্রভাবিত করে। অর্গানিক উপায়ে বাগান মূলত বিষাক্ত নয় এমন পদ্ধতিতে বাগান করার সময়কার সমস্যা দূর করার দিকে মনোযোগ দেয়। যারা অর্গানিক বাগান তৈরীর ক্ষেত্রে নিবেদিতপ্রাণ তারা এটি তৈরির সময় কিছু প্রাকৃতিক জৈবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকে।
- মাটির স্বাস্থ্য এবং জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করা:
যারা অর্গানিক উপায়ে বাগান করে তারা সাধারনত জমি চাষ করার ক্ষেত্রে জমির বাস্তুতন্ত্র রক্ষার্থে জৈব পদার্থ ব্যবহার করে যেমন কম্পোস্ট সার। এক্ষেত্রে তারা কীটনাশক ও সার ব্যবহার করেনা কারণ এগুলো মাটির জন্য ক্ষতিকর। এবং মাটিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া এই জৈব পদার্থ গুলো কে ভেঙে সেখান থেকে উদ্ভিদের জন্য পুষ্টি উপাদানগুলো সরবরাহ করে থাকে।
- মাটির ক্ষয় রোধ করা:
উন্মুক্ত থাকা মাটির বৃষ্টি বা বাতাসের কারণে ক্ষয় হতে পারে। যারা অর্গানিক উপায় বাগান তৈরী করতে চান তারা সাধারণত গাছের শিকড়ের চারপাশে ঘর পাতা ইত্যাদি উপাদান দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করেন যাতে করে মাটির মতো এই মহামূল্যবান সম্পদ এর কয় না হয়।
- কীট ও অসুখ কমানোর চেষ্টা করা:
যারা অর্গানিক উপায় বাগান তৈরি করে তারা সাধারণত কিট এবং অসুখ কমানোর জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করে। এক্ষেত্রে তারা সার ও কীটনাশক এর ব্যবহার কমিয়ে গাছের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অংশ কেটে এবং ছাঁটাই করে থাকে। এছাড়াও তারা অনেক সময় গাছগুলো রক্ষার্থে এক ধরনের আবরণ ব্যবহার করে।
- উদ্ভিদ এবং প্রাণী বৈচিত্র্যে উৎসাহিত করা:
যেহেতু অর্গানিক বাগানের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যময় গাছ এবং সচেতনভাবে সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে সেহেতু যারা অর্গানিক বাগান তৈরি করেন তারা একটি স্বাস্থ্যসম্মত বাস্তুসংস্থানের ব্যবস্থা করেন যেখানে বিভিন্ন উপকারী কীট এসে বাসা বাঁধতে পারে।
যারা অর্গানিক বাগান তৈরি করেন তারা তাদের সমস্ত উপাদান প্রকৃতি থেকেই নিয়ে থাকেন। তারা কৃত্রিম কীটনাশক স্প্রে এর বরং লক্ষ্য রাখেন বাগানে কখন কোন ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সে অনুযায়ী তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে গাছের অসুখ কিংবা কীটপতঙ্গ জনিত সমস্যা দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি আপনার বাগানে কখনো সাদা প্রজাপতি উড়তে দেখেন তাহলে যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে কীটের হাত থেকে বাগানের ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি বাঁচানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শুয়োপোকা ডিম পাড়ার পড়ে কীটনাশক স্প্রে করার চাইতে প্রথমেই আপনার গাছগুলোকে বিশেষ কাপড় দিয়ে ঢেকে গাছের আশেপাশে এই ডিমপাড়া রোধ করতে পারেন।
অর্গানিক উপায়ে যারা বাগান তৈরি করেন তারা এটিকে একটি জীবন্ত বাস্তুসংস্থান হিসেবে চিন্তা করে প্রকৃতির সাথে একাত্মতা রেখে একটি চমৎকার পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করতে পারেন।